মধুবংশীর গলি - জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র
তোমারই প্রেরণা পেয়েছি
বারে
বারে আনন্দে গেয়েছি
নিরঙ্কুশ
এ জীবনের কলনাদে ভরেছে অম্বর।
হে পঁচিশ
নম্বর
মধুবংশীর
গলি,
তোমাকেই
আমি বলি।
রৌদ্রস্নাত
খাটুনির পর সমস্ত দিন
মেরুদণ্ডহীন
মানুষগুলিকে
সন্মান করে,
ঘৃণা করে
আর হিংসা করে,
নগ্ন
নগণ্য সন্ধ্যাকে পাই
-তোড়াবাঁধা শ্মশানে পাঠাবার ফুল-
একটা
অন্যায় শৌখিনতায় মন হারায় কূল,
ঘ্রাণ
নিই প্রাণ ভরে।
হলদে
আকাশ থেকে কার আশীর্বাদ যেন পড়ে ঝরে।
ছারপোকার দৈনিক খাদ্য হিসাবে তাই
খাটিয়ার ওপর বসি, বিড়ি ধরাই
আর, মনে মনে প্রতিজ্ঞা রোজ করি-
দোহাই পতিতপাবন হরি,
আর নয়, আমার লম্পট প্রবৃত্তিগুলিকে,
দস্যু লোভগুলিকে,
চালান করো আন্দামানে।
তার মানে,
স্বার্থ, অর্থ,
জমিদারী
অনর্থ,
টাকা, টাকা আর টাকা,
সমস্ত
দিনের হীন বাণিজ্যটাই ফাঁকা।
শ্রান্ত
শ্লথপথে তাই
তোমারই
দিকে ফিরিবার প্রেরণা পাই,
হে অনবগুণ্ঠিতা,
অকুন্থিতা,
পঁচিশ
নম্বর মধুবংশীর গলি,
তোমায়
চুপি চুপি বলি :
আকর্ষণ? অনেক অনেক আছে,
তোমার
শীতে ঠাসা
অমাবস্যার
বাসা
ইট বের
করা দেয়ালের কোণে কোণে।
তেলমাখা
পাঁচ আঙ্গুলের দাগ, বোনে
পুরনো স্বপ্নের
জাল,
মলিন জীবন
মহীরুহের ডাল।
তারই নিচে-
শ্রীহরি সহায়- আঁকা বাঁকা
কাঠকয়লায়
আঁকা,
জগন্নাথের
পট পেরেক দিয়ে আঁটা,
কোনো সিনেমা-বনিতার
জঘন্য সুন্দর মুখ
আঠা দিয়ে
সাঁটা
অপর দেয়ালে।
এই আবহাওয়াই সার
অধমর্ণ অস্তিত্বের
সাধু টংকার।
কোনো কোনো
ছুটির দিনে অবশ্য স্ত্রীর চিঠি পাই,
দেশান্তরের
নিবিড় বাহুর আশ্লেষে সময় হারাই,
অক্ষম মিনতির
সুর- পড়ি আর তুলি হাই।
তবু চিঠি
পাই আততায়ী জীবনের
যখন চাল কিনি
চল্লিশ টাকায়,
চায়ে চিনি
খুঁজে পাওয়া দায়।
এরই অন্তরালে
দ্বিপ্রহর দগ্ধ মরে শুকিয়ে
যাওয়া খড়খড়ে
দিনগুলির উপর দিয়ে
দুর্মর বসন্তের
দ্বিধাকম্পিত পদধ্বনি শুনি।
দশ আঙুলে
নিংড়ে নেওয়া আয়ুর শেষ প্রহর গুণি।
হঠাৎ চিঠি
আসে,
কোনো তন্ময়
মুহূর্তে।
জানালা গলিয়ে
পিয়ন দেয়, কাশে
একটু জানানি
হিসাবে। হলদে খামে পোরা
শ্রান্ত বিকেলের
রং! ছোরা
শানিয়ে আসে
রাত্রি,
ধীরে ধীরে
বড়ো রাস্তার চৌমাথা পেরিয়ে,
হিংস্র আগ্নেয়
কামনা নিয়ে-
মত্ত আততায়ী
আসে- রাত্রি
অনন্ত পথযাত্রী,-
মিলিটারি
লরির ঘর্ঘর,
রিকশ-র নূপুর,
সুদূর ট্রামের মর্মর,
ধাবমান মোটরের
ক্ল্যাক্ সন্ হর্ন, আর
মেঘে মেঘে
এরপ্লেনের শব্দের ভার
আকাশ ছেঁড়ে,
পঁচিশটা,-
হবে,- চট্টগ্রাম
ফেরতা ত্রিশটা,
হবেও বা,
-কিন্তু হে অনন্তযাত্রী!
হয় নাই এখনও,
হয় নাই শেষ তোর রাত্রি।
আতঙ্কের ঘোমটাপরা
রাস্তার আলো
অতিকৃত কালো
কালো,
নৈশজীবনের
ছায়াদের ডাকে,
ঘরে বাইরে
জানালার ফাঁকে ফাঁকে।
নিরুদ্ধ তৃষ্ণার
তাই খুলে যাই খিল,
চলে রণদগ্ধ
জীবনের ছায়ার মিছিল,
ক্ষুধার হুংকারে
ডোবে উন্মার্গের গান।
বাঁকা টুপিপরা
কোনো আমেরিকান
কাপ্তেনের
লোলুপ শিস
তরুণী রাত্রির
গালে চাবুক মারে। সামরিক আশিস
ঝরে পড়ে বিধ্বস্ত
মাথায়,
চালে ডালে
কাপড়ে ও মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রায়।
কিন্তু ওরা
আছে বেশ!
(এ যাত্রায়
অবশ্য শেষ)
যারা মধ্যরাত্রে
অগাধ নীলিমা চষে নিরীহ ঘুম ভাঙায়,
জেলেদের মতো
তাজা মাছ তোলে ডাঙায়,
যারা তোমার
আমার অবসরের গান ভেঙে চুরমার করে।
মুক্ত প্রাণে
মুক্ত ইচ্ছার সিন্দুকে তালা পড়ে,
শ্লোগানমুখী
মন শানানো সঙিনের মতো ঝলক দিয়ে ওঠে,
ফ্যাসিস্ট-বিরোহী
সংঘে যোগ দেয়,
মুখে মুখে
ফোটে বিদ্রোহের দন্তুর হাসি,
আর, বুকে
সামাজিক যক্ষ্মার কাশি।
তবু এক ফালি
চাঁদের পিঠে ভর করে রাত্রির আকাশ,
আর সপ্তব্যাহৃতি
মন্থন করে অসীম নীল বাতাস,
উঠে আসে শ্রান্ত
অন্যমনস্ক পৃথিবীর উপর।
ছিন্নভিন্ন
অস্তিত্বের ক্লিষ্টগত ভঙ্গি আনে তারই মর্মর।
পারিশ্রমিকহীন
শ্রমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া আয়ু
নিয়ে, রুগ্নস্বপ্ন
দেখি, দীর্ঘশ্বাসে ভরে যায় বায়ু।
তবু, তোমার
চিঠির উত্তর দিয়ে যাচ্ছি ঠিক, প্রতি সপ্তাহে
একটা করে
মল্লিকবাগানের
চুরি করা ফুল খামের ভিতর দিই ভরে।
তারপর, বর্গিরা
আসে।
আকাশে বাতাসে
স্থলে জলে দস্যুদের দুরন্ত পদধ্বনি। ত্রাসে
প্রকম্পিত
মৃগীদের মন। অলস দুর্বল স্নেহ কুড়িয়ে নেয়
প্রচণ্ড সূর্য।
অগ্নিবর্ষী
সকাল বাজালো তূর্য।
মনে হয়, জীবনের
যুদ্ধ এল।
কলোনিতে কেরানিরক্তে
প্রচণ্ড দোলা,
গম্ভীর স্থির
প্রতিজ্ঞাগুলি সারি দিয়ে দাঁড়ায়
ত্রস্ত মনের
সামনে প্রহরির মত:
আমাদের প্রত্যেকের
ইঁদুরের মতো মরাই শেষ নয়,
তারপরেও মহত্তম
ভবিষ্যৎ।
আপাতত তার
আগে পলাশ-রজনিগন্ধা-কিংশুকের
পাঁপড়িগুলি ছিঁড়ে কুটি কুটি
ঝড়ের নখরাঘাতে;
মেঘে মেঘে বজ্রের ভ্রূকুটি।
তা হোক অস্ত্রোপচারও
আরোগ্য এই ভরসায়
সকালে উঠি,
মাটির ভাঁড়ে চা খাই,
চালের দোকানের
সামনে সারি দিই,
সন্ধ্যায়
সমীকরণ সমিতির মিটিং থেকে ফিরি।
পাগলেরা বলে
কী! সমীকরণ আপনিই হবে
কোনো এক অনিবার্য
অমোঘ মুহূর্তে।
ইতি মধ্যে
হাত পা ছুঁড়ে যাও,
অদৃশ্য অস্ত্র
শানাও
কিছু কিছু
মারকাটও চলুক,
যে যাই বলুক
গূঢ় স্বার্থের
খেয়ালী আবহাওয়ার পাল তুলে দাও।
অর্বাচীন!
অর্বাচীন!
জানে না সে
দুর্ধর্ষ জাপান আর পর্যুদস্ত চীন।
অর্থাৎ কে
যে শত্রু ঠিক নেই, নিজেরাই মারামারি করছি,
ঘরে বাইরে
মরছি।
শেষে বঙ্কু
পালের নির্বোধ চিৎকারে সভা ভাঙে,
আমার মনও।
সাময়িক যুদ্ধ বিরতি। মরা গাঙে
বান ডাকায়
দিনান্তের পরিচ্ছন্ন মর্ষিত মন
অবসন্ন শান্তির
স্রোতে।
তাই নিরঙ্কুশ, পবিত্র, নির্মনন অস্তিত্বের পৌরাণিক
পুরে,
বাইরেকে ভুলি, ঘরকে ডাকি
একটা বিশুদ্ধ বিশ্রম্ভালাপের ডিকাডেন্ট সুরে
:
শোনো,
তুমি কোনো,
বরযাত্রার মিছিলে কখনো
বাঁশী-পতাকায় আলোতে মাখানো
নবযাত্রার মিছিলে দেখেছ রূঢ় বিধাতার হাসি।
দূরে,
অতিদূরে,
শ্যামলিম কোন মেদুর সুদূরে
চেন নাই বুঝি পরাণ বঁধুরে
স্বল্প আলোকে কান্নায় ঢাকা ব্যথা মুকুলিত হাসি।
উদ্দাম ভালোবাসি।
তোমার তন্ময় ধ্যান হয়েছে আকাশ পৃথ্বী
পর্বত প্রাকার -
ধরো, এই ভাবেই যদি বা বুঝাই তোমাকে
তোমার বিকল মনকে - অধুনা যা বিরস মলিন, -
কিংবা পাহাড়ে পাহাড়ে একাকার এই কাজের দিন
তোমার মুখেই বাঙ্ময় এই পাইন বন -
শুনে বলেছ হেসে,
রূঢ় বন্ধুর ধারালো চূড়ার এ সমাবেশে,
চলে যাই দূরে, পার হয়ে যাই ঘুমের শেষে -
বলেছ হেসে।
কিংবা, তোমাকে করেছি লক্ষ্য হে অনন্য গতি
রৌদ্রের মুকুটপরা প্রাণঃপুত দিন।
বিচক্ষণ বণিকের অন্যায়ের আভা
আর মুগ্ধ করে না অগণিত মন।
সম্রাটের অনুকম্পা, প্রভুহীন করুণ কুক্কুর,
পথে পথে ফেরে, দুঃস্থ শহরে শহরে
শেষ অপমৃত্যুর প্রহরে।
কাহারও পরার্থপ্রজ্ঞা সভাতে সংগতে
ছিটায় শান্তির কণা, গলিত তুষার।
বক্তব্য আমার
এই, যে আমি বহুবার
শিল্পিত মনের চারু বনেদি ভঙ্গিতে
প্রেম নিবেদন করেছি। সঙ্গীতে
ফুটো ঘর ভরিয়েছি কিংবা কূট কবিতার
মহিমায় আত্মপ্রসন্ন হয়েছি।
কিন্তু মন পেলাম কই,
কর্মের প্রভায় উজ্জ্বল, এই করুণ গানের উপনিবেশে!
কাউকে তো দেখি না বেশ বলিষ্ঠ হেসে
জীবনের দ্বিধান্বিত মুঠোয় চাপ দিয়ে
শক্ত করে ধরে পৃথিবীর কঠিন জাগ্রত পিঠের উপর
চলে ফিরে বেড়ায়।
পট যায় ঘুরে।
অন্ধীকৃত রাত্রির শহরে,
পথে পথে সুগম্ভীর ছায়ার বহর,
ষড়যন্ত্র সংকুল ত্রস্ত কবন্ধের ভিড়।
সুর-রিয়ালিস্ট কবিতার দেশে।
পিকাসো বা যামিনী রায়ের আঁকা
পথঘাট গাছপালা বাড়ী।
ঊর্ধ্বে নীলে আঁকাবাঁকা চাঁদ,
তারই নীচে নিরন্ন বুড়োবুড়িদের চাপা আর্তনাদ,
ক্লিষ্ট চলাফেরা।
অতঃপর ব্রাহ্ম মুহূর্তে, ঘর্মস্রাবী রাত্রির
ওপারে
আলোকসম্ভবা উষার ওষ্ঠপুটে ভৈঁরোর অস্ফুট আলাপ।
ক্ষুধার গর্জনে ছিন্ন প্রশান্ত গৈরিক।
অগণন বালকবালিকাদের
বুভুক্ষা মুখর যাত্রা লেক মার্কেটের দিকে।
নিশ্চিন্ত অবিবেকী মনের শৌখিন গান
তিরস্কৃত, পলাতক দিশাহীন দূরে।
তবু ভাল, আমি এই মধুবংশীপুরে
আছি বেশ; এ বেলা ও বেলা
কেটে যায় ব্যর্থ অন্বেষায়।
তোমার মহিম্ন স্তোত্রে মুখরিত আকাশ বাতাস
হে স্বর্ণবণিক! তুমি দীপ্ত হিরন্ময়।
তোমারই হোক ক্ষয়, হোক ক্ষয়।
(আজ শুনি এক ভরি সোনা একশো ছয়
টাকা।) বুভুক্ষারই জয়।
এ স্বর্ণসন্ধ্যায়
কাতারে কাতারে জমে হিরণ্য শকুন
ডানার ঝাপটে কাঁপে আদিগন্ত স্থবির আকাশ
প্রচ্ছন্ন শবের দেশে।
হ্যাঁ, বলতে ভুলেছি আর এক কথা।
এই তো সেদিন, ট্রেন থেকে দিলো নামিয়ে,
হাতের তলায় সযত্নে চাপা অচল পুরনো টিকিটে,
-
দিলো কে নামিয়ে অচেনা স্টেশনে
জীবনের ট্রেন থেকে।
তাই সেই থেকে
বারবারই অক্ষম প্রয়াস,
চলন্ত রথের পানে খঞ্জের দুরন্ত অভিলাষ
ব্যর্থ হয়, চূর্ণ হয় ঘৃণার পাহাড়ে।
দূরে চলে ট্রেন
দ্রুত - চক্রকঙ্কণ ঝংকারে।
সম্রাজ্ঞীর মতো উপেক্ষায়, ফেলে চলে যায়।
আমি থাকি পড়ে কোনো বিষন্ন সন্ধ্যায়
শেষহীন চাঁদছত্র উপত্যকায়।
চলেছি কোথায় ?
একাকী? ইশারায়
মনে পড়ে দিয়েছিল কেউ এ প্রশ্নের উত্তরও।
একাকীত্বের শৌখিনতায়
সমীক্ষার ক্রূর শ্লেষ হেনেছিল সেও।
(তখন অবশ্য বড় জোর
শ্মশ্রুহীন কৈশোর,)
শিল্পকে কাব্যকে বাঁচাবার জন্য তবু
বলেছিলাম, তুমি তো আজো এই মুখেরই প্রভু,
হে অনন্ত প্রেম!
এই জীবনের সান্ধ্যসভায়
তোমার আসর শূন্য হল
হে প্রেম শূন্য হলো, বিরস গানে
ভরল আকাশ - (লাগছে না ভালো বলছ?
থামা যাক তবে।)
একাকীত্বের দুস্তর প্রান্তর থেকে কবে
উত্তীর্ণ হলাম উদ্দাম শহরে।
ব্যবহারে, বাণিজ্যে
গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে জোট বাঁধে মনে প্রাণে।
নির্জন শীর্ণ একতারা ডোবে সহস্রের ঐকতানে।
এখন চিনেছি যদিও, আরো অনেককে চিনেছি এবার,
অজ্ঞাতবাসের কঠিন আস্তরণ ভেদ করে
বুঝেছি এবার।
দ্বৈপায়ন হ্রদে ডোবা ভগ্নজানু মন,
তোমাকে দেখেছি বারবার এ শহরে হে দুর্যোধন।
লালসার জতুগৃহে ভস্মীভূত তোমার চক্রান্ত
এনেছে যুগান্ত।
অর্জুন, অর্জুন শুধু!
অর্জুন, অর্জুন আজ লক্ষ লক্ষ জনগণমন
দোর্দণ্ড গান্ডীব তাই অতি প্রয়োজন,
বৃহন্নলা ছিন্ন করো ক্লীব ছদ্মসজ্জার ব্যসন।
বিদ্রোহের শমীবৃক্ষে সব্যসাচী অর্থ খোঁজে আজ।
ঘুণগ্রস্ত এই যুগ মৃত্যুজ্বরে কাঁপে হাড়ে হাড়ে,
আরক্ত সূর্যের অস্ত পশ্চিমের রক্তিম পাহাড়ে।
এই বার্তা তৃপ্তি দেয় আমাদের
যাদের,
মন রাঙিয়েছে আগামী যুগের রাঙা আলোয়,
আগত যুগের ‘কামারাদেরিতে’ যারা মুখর,
আমরা তো জানি স্থির বিশ্বাস করি সবে -
ইতিহাসই দেয় আগুনের রঙে সে স্বাক্ষর।
শোনো শোনো তাই,
হে নবীন, হে প্রবীণ, মজদুর, ওহে কৃষাণ,
ওহে মোটা সোটা বেঁটে খেটেখাওয়া কেরানিদল,
হে কাব্যে পাওয়া পালাতক ক্ষীণ কবির দল,
শিল্পীর দল,
হে ধনিক, হে বণিক, আর্য, অনার্য
করো শিরোধার্য -
বৃদ্ধ যুগের গলিত শবের পাশে
প্রাণকল্লোলে ওই নবযুগ আসে।
প্রস্তুত করো তোমাদের সেই সব দিনগুলির জন্য
যখন প্রত্যেক সূর্যোদয়ে পাবে নবজীবনের স্তোত্র,
প্রখর প্রাণরৌদ্রের পানীয় তোমাদের আনন্দিত করবে,
(দুর্বলদের নয়।)
শতধা সভ্যতার পাশে,
লক্ষ কোটি ভগ্নস্তূপের পাশে,
বিদীর্ণ আকাশের নিচে,
উপদ্রুত ঘুমের শিয়রে,
ছিন্নভিন্ন পৃথিবীর বসন্তের পাশে,
লক্ষ লক্ষ নির্জন নিষ্পত্র কৃষ্ণচূড়ার পাশে,
দ্বিধাদীর্ণ জনগণমনে
মহা-আবির্ভাব।
স্বপ্ন জেগে উঠেছে, উঠেছে
স্টালিনগ্রাদে, মস্কোভায়, টিউনিসিয়ায়,
মহাচীনে।
মহা আশ্বাসের প্রবল নিঃশ্বাসে
দুর্দমনীয় ঝড় উঠেছে সৃষ্টির ঈশান কোণে।
উড়িয়ে দেবে দিগ্বিদিকে
শুকনো ধুলো
শুকনো পাতা
ঝরিয়ে দেবে।
অন্ধকারের দুর্গের সিংহতোরণ
গুঁড়িয়ে দেবে।
ইতিমধ্যে প্রস্তুত থাকো সবাই
যখন অত্যাচারীদের পতন -
চরম পতন হবে।
প্রাসাদে, বন্দরে,
বাহিরে, অন্দরে,
প্রতি গ্রামে, নগরে
লক্ষ লক্ষ মনে, দেশে দেশান্তরে,
নীরন্ধ্র নির্মম পতন।
তারপর, অবকাশ
রাত্রি উঠে আসবে গাঢ় নীল,
স্তব্ধ ডানা পৃথিবীর নীড়ে আসবে নেমে
সুস্থ কামনার স্বর্ণচিল,
প্রতিদিনের জ্বলন্ত অস্তের পর,
শ্রম বিরতির পর।
তারপর সুস্থ মুক্ত অনর্গল প্রাণসঙ্গিনীদের নিয়ে
আবিশ্ব প্রাণ-নৃত্যের আসরে
জমবে ভালো, জমবে তখন
মধুবংশীর গলি,
বজ্রনিনাদে তোমাকেও ডেকে বলি।।


0 Comments