সেকেন্ডারি
মেমোরী (Secondary Memory) বা অক্সিলিয়ারি মেমোরী (Auxiliary Memory) ~
আগের পোস্টগুলিতে আমরা মেমোরী কাকে বলে, তার শ্রেণীবিভাগ গুলি এবং প্রাইমারি মেমোরী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। এখন আমরা সেকেন্ডারি মেমোরী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সেকেন্ডারি মেমোরী-তে বিপুল
পরিমান তথ্য বা নির্দেশ সঞ্চয় করে রাখা যায় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও
এই মেমোরীতে থাকা তথ্য মুছে যায় না। অর্থাৎ সেকেন্ডারি মেমোরী কাকে বলে? বলতে গেলে
বলতে হয় যে “কম্পিউটারের যে মেমোরী বা সংরক্ষণ যন্ত্রটিতে কোনো তথ্য বা ইনফর্মেশন
স্থায়ীভাবে (Permanently) রাখা যায় এবং
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও মেমোরীতে থাকা তথ্য মুছে যায় না, তাকে
সেকেন্ডারি মেমোরী বলে”। সেকেন্ডারি মেমোরী অক্সিলিয়ারি মেমোরী (Auxiliary Memory) নামেও পরিচিত। এই মেমোরীর ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশী এবং দাম তুলনামূলক কম।
এই মেমোরীর উদাহরণ হল – হার্ড ডিস্ক (Hard Disk), ফ্লপি
ডিস্ক (Floppy Disk), সি.ডি (CD – Compact Disk), ডি.ভি.ডি (DVD - Digital Versatile Disk) ইত্যাদি। সেকেন্ডারি
মেমোরীকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে – (a) ম্যাগনেটিক
মিডিয়া (b) অপটিক্যাল মিডিয়া। ওপরের ছবিতে ভাগগুলিকে বোঝানো হয়েছে।
ম্যাগনেটিক মিডিয়া (Magnetic Media) ~ ম্যাগনেটিক মিডিয়া হল ম্যাগনেটিক অক্সাইড বা অন্য কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রলেপ দিয়ে তৈরি ধাতব পাত বা পাতলা প্লাস্টিক, যার মধ্যে প্রচুর পরিমানে তথ্য বা ইনফর্মেশন সঞ্চয় করে রাখা যায় এবং সেই তথ্য বা ইনফর্মেশন লেখা বা পড়া যায়। যেমন – হার্ড ডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক ইত্যাদি।
হার্ড ডিস্ক (Hard Disk) ~ হার্ড ডিস্ক (Hard Disk - HDD) হল অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন, এতে প্রচুর পরিমানে তথ্য বা ইনফর্মেশন (Data or Information) সঞ্চয় করে রাখা যায়। কম্পিউটার সিস্টেমের এই ডিস্কে যেসমস্ত তথ্য বা ইনফর্মেশন গুলি সঞ্চিত থাকে সেগুলি স্থায়ী ভাবে সঞ্চিত থাকে অর্থাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এই ডিস্কে থাকা তথ্য বা ইনফর্মেশন মুছে যায় না। কম্পিউটারের যাবতীয় সফটওয়্যার এই হার্ড ডিস্কে লোড থাকে, তার মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) অন্যতম। কম্পিউটার চালু করা থেকে শুরু করে কম্পিউটার সিস্টেম পরিচালনা করা সমস্ত কাজটাই করে এই অপারেটিং সিস্টেম, যেটি লোড থাকে হার্ড ডিস্কে। এই ডিস্কের দুদিক-ই ম্যাগনেটিক অক্সাইডের প্রলেপ দ্বারা আবৃত থাকে। একটি হার্ড ডিস্কের ভেতরে একাধিক পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বৃত্তাকার চাকতির মতো ডিস্ক থাকে। চাকতির মতো ডিস্কের প্রত্যেকটি তলের জন্য একটি করে রিড-রাইট হেড (Read Write Head) থাকে, যা তথ্য সঞ্চয় করতে বা সঞ্চিত তথ্য অ্যাক্সেস (Access) করতে সাহায্য করে। হার্ড ডিস্কের সুরক্ষার কথা ভেবে বা সুরক্ষিত রাখতে একটি ধাতব জ্যাকেটের ভেতরে রেখে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং ব্যবহার করা হয়। হার্ড ডিস্কের ধারণ ক্ষমতা অন্যান্য ডিস্কের থেকে অনেক বেশি। বর্তমানে ১৬০ জি.বি (160 GB) থেকে শুরু করে ৪ টি.বি (4 TB) বা তারও বেশি তথ্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হার্ড ডিস্ক পাওয়া যায়।
ফ্লপি ডিস্ক (Floppy Disk) ~ হার্ড ডিস্কের মতো ফ্লপি ডিস্ক-ও একটি স্থায়ী সংরক্ষণ যন্ত্র অর্থাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ফ্লপিডিস্কে থাকা তথ্য বা ইনফর্মেশন মুছে যায় না। ম্যাগনেটিক অক্সাইডের প্রলেপ লাগানো প্লাস্টিকের পাতলা চাকতির মতো দেখতে বৃত্তাকার পাতের নামই হল ফ্লপি ডিস্ক। ফ্লপি ডিস্কের পাতটি যাতে নোংরা বা নষ্ট হয়ে না যায় তার জন্য এই ডিস্কের সুরক্ষার জন্য শক্ত চৌকো প্লাস্টিকের জ্যাকেটের ভেতরে ঢাকা থাকে। পাতটি যাতে হেড স্পর্শ করতে পারে তার জন্য জ্যাকেটের একটি অংশ কাটা থাকে এবং ধাতব পাত দ্বারা আবৃত থাকে। ডেটা অ্যাক্সেস (Access) করার সময় ধাতব পাতটি সরে যায়। বর্তমানে 3.5 ইঞ্চি, 5.25 ইঞ্চির ফ্লপি ডিস্ক দেখা যায়। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ফ্লপি ডিস্কের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।
অপটিক্যাল মিডিয়া (Optical Media) ~ যে মিডিয়ার তথ্য লেজার রশ্মি ব্যবহার করে পড়া হয় বা লেখা হয়, সেগুলিই হল অপটিক্যাল মিডিয়া। গোলাকার প্লাস্টিকের চাকতির ওপরে অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপ দিয়ে অপটিক্যাল মিডিয়া তৈরি হয়। এই মিডিয়ার ধারণক্ষমতা কম এবং দামও অনেক কম। এই মিডিয়ার উদাহরণ হল – CD, DVD, Blue Ray Disk ইত্যাদি।
সি.ডি বা কমপ্যাক্ট ডিস্ক (CD or Compact Disk) ~ CD বা Compact Disk বৃত্তাকার প্লেটের মতো হয়। ১৯৮৭ সালে ফিলিপ্স এবং সোনি কোম্পানি প্রথম কমপ্যাক্ট ডিস্ক তৈরি করে। CD হালকা ও প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হওয়ায় ইহা সহজে বহনযোগ্য। হার্ড ডিস্কের মতো স্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য কমপ্যাক্ট ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। একটি CD সাধারনত 650MB থেকে 700MB পর্যন্ত তথ্য ধারণ করতে পারে। এই ডিস্কে লেজার রশ্মির সাহায্যে তথ্য লেখা ও পড়া যায়। সিডির মধ্যে লেখা পড়তে 780 ন্যানোমিটার লাল লেজার রশ্মি ব্যবহার হয়। লেজার রশ্মি ব্যবহার হওয়ায় তথ্য সহজে নষ্ট হয় না। কম্পিউটারে CD গুলি চালানোর জন্য CD Drive (সিডি ড্রাইভ) ব্যবহার করা হয়। CD বা Compact Disk সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে, যথা- CR-R ও CD-RW.
CD-R ~ এই ধরনের CD তে তথ্য একবার লেখা হয়ে গেলে বা সঞ্চয় করা হয়ে গেলে সেই তথ্য আর মোছা যায় না, শুধুমাত্র Read করা অর্থাৎ পড়া যায়, তাই এই ধরনের CD কে Non-Rewritable CD বলা হয়।
CD-RW ~ এই ধরনের CD তে তথ্য লেখা বা সঞ্চয় হয়ে যাওয়ার পরও সেই তথ্য মুছে ফেলা যায়। নতুন করে আবার তথ্য সঞ্চয় করা সম্ভব। অর্থাৎ এই ধরনের CD তে তথ্য পড়া এবং সেই তথ্য মুছে পুনরায় তথ্য সঞ্চয় করা সম্ভব, তাই এই ধরনের CD কে Re-Writable CD বলা হয়।
DVD (Digital Versatile Disk) ~ সিডির মতো ডিভিডিও গোলাকার প্লেটের মতো দেখতে একটি অপটিক্যাল মিডিয়া ডিভাইস। তবে সিডির থেকে ডিভিডি বা ডিজিটাল ভারসাটাইল ডিস্ক এর ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। একটি DVD তে সাধারনত 4.7GB থেকে 17.08GB পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। ডিভিডিও সহজে বহনযোগ্য। এখনকার দিনে DVD সিনেমা, গেম, বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ইত্যাদি সঞ্চয় করে রাখতে ব্যবহার করা হয়। DVD-তে তথ্য লেখা বা পড়ার জন্য 650 ন্যানোমিটার লাল লেজার রশ্মি ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারে DVD গুলি চালানোর জন্য DVD Writer (ডিভিডি রাইটার) ব্যবহার করা হয়। সিডির মতো ডিভিডিও দুই রকমের হয়ে থাকে – Non-Rewritable DVD ও Re-Writable DVD.
Blue Ray Disk (ব্লু-রে ডিস্ক) ~ ব্লু-রে ডিস্ক ডিভিডির মতোই দেখতে গোলাকৃতি কিন্তু এই অপটিক্যাল মিডিয়া ডিভাইস এর ধারণ ক্ষমতা ডিভিডির থেকে অনেকগুণ বেশি। সাধারনত এই ধরনের ডিস্কে হাই-ডেফিনেশন অর্থাৎ HD ভিডিও, বড়ো আকারের তথ্য সঞ্চয় করে রাখা হয়। নীল বেগুলি লেজার রশ্মির মাধ্যমে এই ডিস্কে তথ্য লেখা বা এই ডিস্কে সঞ্চিত থাকা তথ্য পড়া যায়। এই ধরনের ডিস্কে তথ্য লেখা বা পড়ার জন্য 405 ন্যানোমিটার নীল বেগুলি লেজার রশ্মি ব্যবহার হয়। নীল বেগুলি লেজার-এর নাম থেকেই ব্লু-রে ডিস্ক নামটি এসেছে। ব্লু-রে ডিস্কের ধারণ ক্ষমতা 25GB বা 50GB হলেও, বর্তমানে 100GB, 200GB পর্যন্ত সঞ্চয় ক্ষমতা সম্পন্ন ব্লু-রে ডিস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটারে ব্লু-রে ডিস্ক গুলি চালানোর জন্য Blue Ray Disk Drive (ব্লু-রে ডিস্ক ড্রাইভ) ব্যবহার করা হয়। ব্লু-রে ডিস্কও সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
BD-R ~ এই ধরনের ব্লু-রে ডিস্কে একবার লেখা হয়ে যাওয়ার পর সেই তথ্য মোছা যায় না। ইহার ফুল ফর্ম হল ব্লু-রে ডিস্ক রেকর্ডেবল (Blue Ray Disk Recordable)।
BD-RE ~ এই ধরনের ব্লু-রে ডিস্কে তথ্য লেখা হয়ে যাওয়ার পর সেই তথ্য পড়া যায়, তার সাথে সাথে তথ্য মোছাও যায় এবং পুনরায় তথ্য লেখা যায়। ইহার ফুল ফর্ম হল ব্লু-রে ডিস্ক রেকর্ডেবল ইরেসেবল (Blue Ray Disk Recordable Erasable)।
0 Comments