প্রিন্টার (Printer) কী? প্রিন্টার কতপ্রকার ও কি কি? প্রিন্টারের ইতিহাস

আমরা অনেকেই কম-বেশী কম্পিউটার ব্যবহার করি। কেউ বাড়ীতে, কেউ অফিসে, কেউ আবার নিজের পার্সোনাল কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা যদি কোনো কিছু কম্পিউটারে লিখে সেটা কাগজে ছাপা আকারে বের করতে চায়, ধরে নাও একটা চিঠি টাইপ করে সেটা কাগজে ছাপা আকারে বের করতে চাইছি, সেই ছাপার কাজটি করে প্রিন্টার (Printer) আর ওই ছাপানোর ব্যাপারটিকে বলা হয় প্রিন্ট (Print)আমরা আগের পোস্ট গুলি থেকে মাউস, কীবোর্ড, মনিটর সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা প্রিন্ট এবং প্রিন্টার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

প্রিন্টার কী?

যে যন্ত্রের সাহায্যে কম্পিউটার হতে কোনো লেখা, ছবি ইত্যাদি কাগজের ওপরে ছেপে বের করা হয়, তাকেই প্রিন্টার (Printer) বলে। ইহা একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। প্রিন্টারের মাধ্যমে কম্পিউটার হতে আমরা কোনো লেখা বা ছবি কাগজের ওপরে ছেপে হাতে পায় অর্থাৎ আউটপুট পায়। সেই কারনে প্রিন্টার কম্পিউটার সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস।

প্রিন্ট আউট কী?

প্রিন্টারের মাধ্যমে কাগজে কোনো লেখা বা ছবি বা অন্য কিছু প্রিন্ট বা ছাপিয়ে বের করার পদ্ধতিকে প্রিন্ট আউট (Print Out) বলা হয়।

প্রিন্টারের ইতিহাস –

আমরা জানি কম্পিউটারের জনক বলা হয় চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage)-কে। এনার মধ্যেই আসে প্রিন্টারের ধারণা এবং সেই ধারণা থেকেই তিনি প্রিন্টার ডিজাইন করেন এবং প্রিন্টার আবিষ্কার করেন।

প্রথম বিদ্যুৎ চালিত প্রিন্টার ছিল ১৯৬৮ সালে জাপানী কোম্পানি এপসন (EPSON) দ্বারা তৈরি করা, যার নাম ছিল EP-101.

এরপর HP কোম্পানি ১৯৮৪ সালে এইচ.পি. লেজার জেট (HP Laser Jet) নামে লেজার প্রিন্টার তৈরি করে। এই প্রিন্টার এর গতি তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং কাজও তুলনামূলক দ্রুত হয়।

এরপর প্রিন্টারের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ফলে ধীরেধীরে বিভিন্ন সংস্থা উন্নতমানের প্রিন্টার তৈরি করতে শুরু করে।

প্রিন্টারের প্রকারভেদ –

প্রিন্টারের প্রযুক্তি ও ব্যবহার এর ওপর নির্ভর করে প্রিন্টার কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer)

২. নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer)

What is Printer? And its Classification.

এখন আমরা ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার এবং নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার নিয়ে আলোচনা করবো।

১. ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer) – প্রত্যেক প্রিন্টারে প্রিন্ট করার জন্য একটি হেড থাকেযে প্রিন্টারে কাগজে কোনো কিছু প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টারের হেডটি কাগজ কে স্পর্শ করে, তাকে ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার বলে। প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টারের হেডটি প্রিন্টারের মধ্যে থাকা কাগজের ওপরের রিবনে চাপ প্রয়োগ করে এবং শব্দের উৎপন্ন হয়। এই প্রিন্টারে শুধুমাত্র সাদা-কালো প্রিন্ট করা যায় এবং প্রিন্টআউট খুব একটা পরিস্কার আসে না। এই ধরনের প্রিন্টারের উদাহরণ হল – ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার, লাইন প্রিন্টার, ডেইজি হুইল প্রিন্টার

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার সম্পর্কে জেনে রাখার বিষয় (বৈশিষ্ট্য) –

প্রিন্টিং হেডটি কাগজকে স্পর্শ করে।

এই প্রিন্টারে ব্যবহৃত কালির দাম তুলনামূলক কম।

প্রিন্টারের হেডের নিচে এবং কাগজের ঠিক ওপরে কালিযুক্ত রিবন বা ফিতা লাগানো থাকে।

হেডটি ফিতা দিয়ে কাগজের ওপরে ঘর্ষণ করে প্রিন্ট করে।

ঘর্ষণের ফলে শব্দের সৃষ্টি হয়।

এই প্রিন্টারের প্রিন্টিং কোয়ালিটি নিম্নমানের, প্রিন্ট করার গতি বা স্পীড অনেক কম এবং খরচ-ও অনেক কম।

এই প্রিন্টারে রঙিন কোনো কিছু লেখা বা ছবি প্রিন্ট করা যায় না।

ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot Matrix Printer) – ইহা এক ধরনের ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। এই ধরনের প্রিন্টারে প্রিন্টিং হেডে কিছু পিন থাকে। প্রিন্ট করার সময় হেডটি কালিযুক্ত রিবনের বা ফিতার ওপরে আঘাত করে কাগজের ওপর অক্ষর ফুটিয়ে তোলে। হেডে থাকা পিন দিয়ে ছোটো ছোটো ডট-এর সাহায্যে একটি করে ক্যারেক্টার প্রিন্ট হয়। এর ফলে কাগজের ওপরে প্রয়োজনীয় অক্ষরের প্রতিলিপি তৈরি হয়। কাগজের ওপর ঘর্ষণজনিত কারনে প্রচুর শব্দের সৃষ্টি হয়।

Dot Matrix Printer
 

লাইন প্রিন্টার (Line Printer) – ইহাও এক ধরনের ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। এই ধরনের প্রিন্টার গুলি একবারে একটি সম্পূর্ণ লাইন প্রিন্ট করতে পারে। এই প্রিন্টারেও প্রিন্টিং এর সময় শব্দের সৃষ্টি হয়।

Line Printer
 

ডেইজি হুইল প্রিন্টার (Daisy Wheel Printer) – ডেইজি হুইল প্রিন্টার এক ধরনের ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। এই প্রিন্টার শুধুমাত্র অক্ষর ও চিহ্নগুলি প্রিন্ট বা মুদ্রণ করতে পারে, কোনো ছবি বা গ্রাফিক প্রিন্ট করতে পারে না।

Daisy Wheel Printer

 

২. নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer) - ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের মতো নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারেও প্রিন্ট করার জন্য একটি হেড থাকে। যে প্রিন্টারে কাগজের ওপরে কোনো লেখা বা ছবির প্রিন্ট নেওয়ার সময় প্রিন্টারের হেডটি কাগজ কে স্পর্শ করে না, তাকে নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার বলে। এই ধরনের প্রিন্টারে শব্দের সৃষ্টি হয় না এবং প্রিন্টিং কোয়ালিটি উন্নতমানের অর্থাৎ লেখা বা ছবির প্রিন্ট আউটপুট পরিস্কার আসে। এই ধরনের প্রিন্টারের উদাহরণ হল – ইঙ্কজেট, লেজার, থার্মাল প্রিন্টার

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার সম্পর্কে জেনে রাখার বিষয় (বৈশিষ্ট্য) –

এই প্রিন্টারে প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টিং হেডটি কাগজকে স্পর্শ করে না।

প্রিন্ট করার সময় হেডটি কাগজ স্পর্শ না করায় ঘর্ষণ হয় না, ফলে প্রিন্টারে শব্দের সৃষ্টি হয় না।

এই প্রিন্টারের প্রিন্টিং কোয়ালিটি উন্নতমানের এবং খরচ-ও বেশি

প্রিন্ট করার গতি বা স্পীড তুলনামূলক বেশি

এই প্রিন্টারে সাদা-কালো ও রঙিন উভয় লেখা বা ছবি প্রিন্ট করা যায়।

ইঙ্কজেট প্রিন্টার (Inkjet Printer) – ইঙ্কজেট প্রিন্টার এক ধরনের নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। এই প্রিন্টারে লিকুইড অর্থাৎ তরল কালি ব্যবহার করা হয়। সালা-কালো, রঙিন সবধরনের প্রিন্ট এই প্রিন্টারে করা সম্ভব। সাদা-কালো প্রিন্ট এর জন্য কালো কালি (Black Ink) এবং কালার বা রঙিন প্রিন্ট করার জন্য তিনটি কালার নীল (Cyan), ম্যাজেন্টা (Magenta), হলুদ (Yellow) ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকটি কালার কার্টিজ (Cartridge)-এর নিচে ছিদ্রযুক্ত নজেল বা নল থাকে। কালির ফোঁটা সেই লজেল বা নল দিয়ে বেরিয়ে কাগজের ওপর বিভিন্ন লেখা বা ছবি প্রিন্ট হয়। এই প্রিন্টার এর প্রিন্ট কোয়ালিটি খুব উন্নতমানের এবং দ্রুত প্রিন্ট হয়। শব্দের সৃষ্টি হয় না। তবে প্রিন্টারের হেডটি ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের মতো মজবুত বা শক্তিশালী নয়, বেশি প্রিন্ট হয়ে গেলে বা কিছুদিন ব্যবহার হয়ে গেলে হেডটি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এই প্রিন্টারের জন্য যে কালি গুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলির দাম তুলনামূলক বেশি।

Inkjet Printer
 

লেজার প্রিন্টার (Laser Printer) – ইহা এক ধরনের নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer)কোনো লেখা কাগজের ওপর প্রিন্ট করার জন্য এই প্রিন্টারে কার্বন গুঁড়োর মতো গুঁড়ো কালি ব্যবহার করা হয়। এই গুঁড়ো কালি একটি কার্টিজ বা টোনারের মধ্যে ভরা থাকে। এই প্রিন্টারে প্রিন্টআউট কোয়ালিটি উন্নতমানের হয়, প্রিন্টআউট খরচ কম, দ্রুত প্রিন্ট করা যায় এবং স্থায়িত্ব বেশি, তাই এই প্রিন্টারের দামও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।

Laser Printer
 

থার্মাল প্রিন্টার (Thermal Printer) – এই প্রিন্টার যেকোনো বিল প্রিন্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ইহা এক ধরনের নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার।

Thermal Printer

 

প্লটার (Plotter) – প্রিন্টারের মতোই দেখতে প্লটার একটি আউটপুট ডিভাইস। ইহার সাহায্যে কাগজ বা অন্য কোনো জিনিসের ওপর প্রিন্ট করা হয়। ইহা আকারে অনেকটা বড় হয়। প্রিন্টারের মতো প্লটারেও কালি থাকে, যার সাহায্যে সাদা-কালো ও রঙিন উভয় প্রিন্ট করা সম্ভব। প্রিন্ট করার জন্য প্লটারের হেডে কালিপূর্ণ কলম থাকে, এই কালিপূর্ণ কলমের সাহায্যেই প্রিন্ট হয়। প্লটার বিভিন্ন ধরনের বড় বড় প্রিন্টআউট যেমন-ফ্লেক্স অর্থাৎ সাইন বোর্ড, বিজ্ঞাপনের পোস্টার, হোডিং বা যেকোনো বড় ধরনের প্রিন্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

Plotter

 

মনে রাখতে হবে –

  • প্রিন্টার একটি আউটপুট ডিভাইস।
  • প্রিন্টার-কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার এবং নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার।
  • ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের উদাহরণ – ডট ম্যাট্রিক্স, লাইন, ডেইজি হুইল প্রিন্টার।
  • নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের উদাহরণ – ইঙ্কজেট, লেজার, থার্মাল প্রিন্টার।
  • প্লটার নামে এক ধরনের প্রিন্টার রয়েছে, যার থেকে আমরা বড় বড় কোনো বিজ্ঞাপন, হোডিং, সাইন বোর্ড ইত্যাদি প্রিন্ট করতে পারি।
  • ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারে শব্দের সৃষ্টি হয় কিন্তু নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারে ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের মতো শব্দের সৃষ্টি হয় না।
  • নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের দাম তুলনামূলক বেশি এবং প্রিন্টআউট কোয়ালিটি উন্নতমানের।

Post a Comment

0 Comments